শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার কণ্ঠশিল্পী অভি?

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার কণ্ঠশিল্পী অভি?

স্বদেশ ডেস্ক: পুরান ঢাকায় তরুণ কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ উল্লাহ অভি ওরফে নিরব অভিকে কুপিয়ে খুন করার পর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৩ জুন সকালে অভির মেয়েবন্ধু আঁখি আক্তারের বাড়িসংলগ্ন বংশাল থানাধীন মুকিমবাজার পঞ্চায়েত কমিটির পারিবারিক কবরস্থানে অভিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাওয়া যায়। তালাবদ্ধ ওই কবরস্থানে খুনিরা অভিকে কুপিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা দামের একটি অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।

রহস্যময় কারণে ওই ফোন থেকে অভির গ্রামীণফোনের সিমটি খুলে তারই নন-অ্যানড্রয়েড আরেকটি ফোনে ঢুকিয়ে ফোনটি আহত এ যুবকের পাশে ফেলে যায় খুনিরা। যদিও নিয়ে যায় অভির মানিব্যাগে রক্ষিত ১৪ হাজার টাকা, মাথার ক্যাপ, স্যান্ডেল, গায়ে জড়ানো একটি কাপড় ও ঘরের চাবি। এভাবে সিমসহ ফোন ফেলে যাওয়ার কারণে প্রশ্ন জেগেছে এটি কি শুধুই ছিনতাইবাজদের কাণ্ড, নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? অভিকে কোপানোর ধরন, তার শরীরে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার দাগ, আঘাতে ডান চোখটি প্রায় বেরিয়ে আসা এবং এক পা ছোট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে তার স্বজনদের ধারণা, ওই তালাবদ্ধ কবরস্থানে অভিকে হত্যা করা হয়নি।

অন্য কোথাও হত্যার পর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তার লাশ ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে মুকিমবাজার কবরস্থানে। আর এ হত্যাকা-ের নেপথ্যে অভির মেয়েবন্ধুরও যোগসাজশ থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাদের। অভির বড় বোন তাসনুহা আক্তার পন্টি জানান, আঁখির সঙ্গে অভির বন্ধুত্বপূর্ণ বা এর চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুকিমবাজার কবরস্থানের যেখান থেকে আহত অভিকে উদ্ধার করা হয়, সেই স্থানসংলগ্ন ৪ তলা ভবনের তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া আঁখিদের বাসায় অভি প্রায়ই যাতায়াত করতেন বলে জানতে পেরেছেন তারা। ঈদের আগে অভিকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন আঁখি। কিন্তু অভি এতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরে অভিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল আঁখি। অভির মেসেঞ্জারের চ্যাট হিস্ট্রি ঘেঁটে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তাসনুহা ও অন্য স্বজনরা।

তাসনুহা জানান, ঈদের দিন নাকি অভি তাকে বলেছিলেন-‘তোমাদের কথাই সত্য, ওই মেয়ে (আঁখি) ভালো না, খারাপ। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ঠিক হয়নি। আমি আর তার (আঁখি) সঙ্গে নাই।’ এর আট দিন পর পৈশাচিক হামলার শিকার হন অভি। তাসনুহা পন্টি আরও জানান, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তড়িঘড়ি বাসা থেকে বের হন অভি, যা বাড়ির সিসি ক্যামেরায়ও দেখা গেছে। কবরস্থানের যেখানে অভিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, সেই স্থান বরাবর কবরস্থানের বাইরে আঁখিদের বাসা। মুকিমবাজার কবরস্থানটির চারপাশ ঘিরে বিভিন্ন ভবনের দেয়াল থাকায় পেছন থেকে কারও পক্ষেই ঢোকা সম্ভব না। ঘটনার সময় ওই কবরস্থানের গেট ছিল তালাবদ্ধ। তাই সবার সামনে দিয়ে কবরস্থানের সামনের দিকের দেয়াল টপকে ভেতরে যাওয়ার কথা না অভির।

এ ছাড়া স্থানীয় কেউ কেউ তাসনুহাদের জানিয়েছেন, সকালে কবরস্থানের ভেতরে ওপর থেকে ভারী কিছু পতনের শব্দ পেয়েছেন তারা। তাই সব মিলিয়ে তাদের ধারণা, আঁখি যে ভবনে থাকে, সেই ভবনে অভিকে হত্যার পর ছাদ থেকে কবরস্থানে ছুড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। যার ফলে অভির একটি চোখ প্রায় বেরিয়ে আসা ছাড়াও এক পা ছোট হয়ে গেছে। আর টানাহেঁচড়ার কারণে শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে চামড়া ছিলে গেছে। অভির স্বজনরা বলছেন, আঁখিরা যে ভবনে বাস করেন, সেই ভবনের ছাদের একটি পিলারে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলার মাঝের সিঁড়ির দেয়ালে শুকনো রক্তের মতো ছোপ ছোপ কিছু দাগ দেখা গেছে। এ ছাড়া অভি আহত হলেও তিনি মারা গেছেন বলে প্রথম চাউর করেন আঁখি। সেই সময়কালে তিনি একেক জনকে একেক রকম তথ্য দেন।

কাউকে তিনি বলেন, রান্নাঘরের জানালা দিয়ে অভিকে রক্তাক্ত অবস্থায় কবরস্থানে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। অন্য কাউকে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে অভির উপর হামলার কথা জানতে পেরেছেন তিনি। কারও কারও কাছে এমনও বলেছেন যে, আঁখিদের গৃহকর্মী নাশতা আনতে গিয়ে মানুষের জটলা দেখে সেই জটলা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখতে পায় অভিকে। এর পর বাসায় এসে তাকে জানায়। অভির লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার আগেই আঁখি নাকি অভির বোন তাসনুহাসহ অনেকের কাছেই বলেছেন, দুর্বৃত্তরা অভির মাথার পেছনে একটি এবং মাথার মাঝখানে ও সামনে দুটি কোপ দিয়েছে। আর মাথার বামপাশে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।

এসব তথ্য তুলে ধরে তাসনুহা প্রশ্ন রাখেন-পুলিশ যে তথ্য জানে না, আঁখি সে তথ্য কোথায় পেল? ছিনতাইকারীরা যদি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই অভিকে হত্যা করত, তা হলে একটা মোবাইল তার পাশে রেখে যেত কি? শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়ে থাকলে এক ফোনের সিম ফেলে যাওয়া অপর ফোনে লাগিয়ে দিয়ে যেত কি? তাদের কি যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে যাওয়ার কথা না? এসব প্রশ্ন রেখে তাসনুহা বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এবং এতে আঁখি ও তার লোকজনের হাত রয়েছে বলেই আমাদের বদ্ধমূল ধারণা। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভির খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

অভির স্বজনদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আঁখি আক্তার গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ছোটবেলা থেকেই অভির সঙ্গে আমার পরিচয়। আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। এর বেশি কিছু নয়। অভির মৃত্যুর পর র‌্যাব-পুলিশ কয়েক দফায় আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে ছেড়েও দিয়েছে। আঁখি জোর দিয়ে বলেন, আমি চাই অবিলম্বে অভির খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

বংশাল থানার ওসি সাহিদুর রহমান জানান, অভির সঙ্গে এক নারীর সম্পর্ক থাকার বিষয়ে আমরা অবগত। তবে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্ভাব্য সব কারণই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভির খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877